“ জঙ্গীবাদ ও জঙ্গীবাদ দমনে আমাদের করনীয় ( বিভিন্ন ধর্মে এ ব্যাপারে বক্তব্য সহকারে) “

    

( শহীদ দিবস উপলহ্মে লেখাটি প্রকাশ করলাম, অনেক আগেই লিখেছি) 
“ জঙ্গীবাদ ও জঙ্গীবাদ দমনে আমাদের করনীয় ( বিভিন্ন ধর্মে এ ব্যাপারে বক্তব্য সহকারে) “
- সাকিল রুহানী সরকার
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটি হল জঙ্গিবাদ , এবং সবচেয়ে ভীতিকর শব্দ তো বটেই ।
আসুন জেনে নিই - জঙ্গিবাদ কি ? আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন গুলোর পরিচয় ও জঙ্গিবাদ নিধনে আমাদের করনীয় ।
জঙ্গীবাদের শাব্দিক পরিচয়-
জঙ্গীবাদ শব্দটি জঙ্গ শব্দ থেকে উৎপত্তি , এটি একটি ফার্সি ও উর্দু ভাষার শব্দ ।
জঙ্গ শব্দের অর্থ , যুদ্ধ ,তুমুল লড়াই , প্রচন্ড ঝগড়া ইত্যাদি , আর জঙ্গি শব্দের অর্থ , যোদ্ধা ।
জঙ্গিবাদ বলতে বোঝায় , জঙ্গিদের মতবাদ বা কর্মকাণ্ড , ইংরেজিতে একে militancy বলে ।
জঙ্গীবাদের পারিভাষিক পরিচয়-
কাউকে ভয়ভীতি ও সম্ভ্রন্ত করার উদ্দেশ্যে সহিংস আচরন করার নাম জঙ্গীবাদ ।
ভাল করে বললে , ধর্মীয় কারনে , রাজনৈতিক কারনে চোরা গুপ্তা হামলা , আতর্কিত হামলা –হত্যা , আত্মঘাতী হামলা , বা কোন মতবাদ সমাজে প্রতিষ্ঠার লক্ষে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার নামই জঙ্গিবাদ ।
 কিছু আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গী সংগঠনঃ
১. আইএস
২. হামাস ( অনেকের মতে স্বাধীনতাকামী)
৩. হিজবুল্লাহ ( অনেকের মতে স্বাধীনতাকামী)
৪. তালেবান
৫. আল-কায়েদা
৬. লস্করে-তৌয়েবা
৭. আল-শবার
৮. বোকো হারাম
কুক্ষাত কিছু আন্তর্জাতিক অইসলামী জঙ্গী সংগঠনঃ
১. রিয়েল ( আই,আর,এ ) – আয়ারলয়ান্ড ভিত্তিক
২. FARC – কলম্বো ভিত্তিক
৩. এল,আর,এ – উগান্ডা ও সুদান ভিত্তিক
৪. এন,পি,এ – ফিলিপাইন ভিত্তিক
৫. ইউ ,ডি ,এ – দক্ষিন আয়ারলয়ান্ড ভিত্তিক
৬. রিরা
৭. ই,টি,এ –ফ্রান্স ও স্পেন ভিত্তিক ( ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত )
ফোবারস ম্যাগাজিন এর তথ্য মতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী জঙ্গী সঙ্গঠনের তালিকা –
১. আইএস ( বার্ষিক আয় ৩ বিঃ মাঃ ডলার )
২. হামাস ( বার্ষিক আয় ১ বিঃ মাঃ ডলার )
৩. FARC ( বার্ষিক আয় ৬০০ মিঃ মাঃ ডলার )
৪. হিজবুল্লাহ ( বার্ষিক আয় ৫০০ মিঃ মাঃ ডলার )
৫. তালেবান ( বার্ষিক আয় ৪০০ মিঃ মাঃ ডলার )
৬. আল-কায়েদা ( বার্ষিক আয় ১৫০ মিঃ মাঃ ডলার )
৭. লস্করে-তৌয়েবা ( বার্ষিক আয় ১০০ মিঃ মাঃ ডলার )
৮. আল-শবার ( বার্ষিক আয় ৭০ মিঃ মাঃ ডলার )
৯. রিয়েল আই,আর,এ ( বার্ষিক আয় ৫২ মিঃ মাঃ ডলার )
১০ . বোকো হারাম ( বার্ষিক আয় ৫০ মিঃ মাঃ ডলার )
জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ সমন্ধে বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ –
১. ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি , শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে এই পৃথ্বীতে শান্তির দুত , মোহাম্মাদ (সাঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন একমাত্র শান্তির বানী নিয়ে , ইসলামে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ এর কোন স্থান নেই , যারা ইসলামের নামে জঙ্গী কর্মকাণ্ড করে আসছে তারা কখোনোই মুসলিম হতে পারেনা , কেননা এ সমন্ধে পবিত্র কোরআনে এসেছে – “ তোমরা জমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিওনা “ , আত্মঘাতী হামলার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে – “ আর তোমরা নিজেদের জীবন নিজেরাই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিওনা “ , জিম্মী দশায় থাকা মনুষ্যদের ব্যাপারে কোরআনে স্পষ্ট ভাবে আল্লাহ্‌ বলেছেন – “ তোমরা জীম্মিদের হত্যা করিওনা “ ।
২. বৌদ্ধ ধর্ম এর প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ মানব সমাজে যে ১০টি নীতি প্রচলন করেছিলেন তার ১ম টি ছিল , “ তুমি কোন জীবকে হত্য করবেনা “ এবং ৩য় টি ছিল “ কোন অত্যচার বা নির্যাতন করিওনা “ , এ থেকে বোঝা যায় বৌদ্ধ ধর্মেও জঙ্গীবাদ এর স্থান নেই ।
৩. সনাতন ধর্ম মতে খারাপ লোক তাদের মৃত্যুর পর নরকে যাবে , এক্ষেত্রে বিভিন্ন কুকর্মের জন্যে আলাদা আলাদা নরকের ব্যাবস্থা আছে , যারা জুলুম অত্যাচার করে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের জন্য নির্ধারিত নরকের নাম “ শুকরমুখম” এথেকে এটা নিশ্চিত যে বিশ্বের কোন ধর্মেই জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদ এর স্থান নেই ।
উপরোক্ত বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ ও আদেশ নিষেধের ভিত্তিতে বোঝা গেল যে , জঙ্গীবাদ কোন ধর্মেই সমর্থন করেনা , বরং এর বিরুদ্ধে কঠর নির্দেশ দেয়া হয়েছে , জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই , ধর্মীয় জ্ঞান থাকলে সে কখোনোই জঙ্গী কর্মে লিপ্ত হতে পারেনা ।
জঙ্গীবাদ দমনে আমাদের করনীয়-
১. জঙ্গীবাদ দমনে ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে ।
২. ধর্মীয় নেতাদের জঙ্গীবাদ বিরোধী প্রচারনা চালাতে হবে ।
৩. জঙ্গীবাদ দমনে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে ।
৪. জঙ্গীবাদ দমনে সমাজের যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে এবং নিজেদের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে ।
৫. ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান বিতরন করতে হবে সকলের মাঝে ।
৬. অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং সেই সাথে ছেলে মেয়েদের গতি পথ লক্ষ্য রাখতে হবে ।
৭. শিক্ষকদের জঙ্গীবাদ এর ক্ষতিকারক দিক ছাত্রদের মাঝে তুলে ধরতে হবে এবং প্রয়োজনে সাপ্তাহিক সচেতনতা মুলক মিটিং করা যেতে পারে ।
৮. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুষ্ঠ ব্যাবহার নিশ্চিত করনের মাধ্যমেও জঙ্গী কর্মকাণ্ড অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব ।
৯. মিডিয়া গুলো সামাজিক সচেতনতা মুলক প্রামান্য চিত্র প্রচার এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব ।
১০. জঙ্গীবাদ দমনে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠর অবস্থানে থাকা জঙ্গীবাদ দমনে অধিক কার্যকরী ।
১১. সরকার জঙ্গীবাদ দমনের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করলে ফলপ্রুস হবে বলে আশা করছি ।
১২. জঙ্গীবাদ দমনে বিশেষ আইন প্রণয়ন (মৃত্যু দন্ডের বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়ন করে ) ও এর কঠোর ব্যাবহার নিশ্চিত করে সরকার অতি দ্রুত জঙ্গী দমন করতে পারবেন ।
জঙ্গীবাদ রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় , দেশ যখন উন্নত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে দেখছে ঠিক এসময় জঙ্গী কর্মকাণ্ড আমাদের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে , একমাত্র আমরাই পারি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক গন জাগরণ সৃষ্টি করে এর দমন করতে , কারন এদেশ আমার ,আপনার , সবার , তাই দেশের ছাত্র সমাজকেই এটি দমনে বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে ।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন দেশে জঙ্গীদের স্থান হতে পারেনা , ৫২ তে পেরেছি , ৭১ এ পেরেছি , এই সময়েও পারবো ইনশাআল্লাহ ।
তরুনরাই এদেশের সম্পদ , তরুণরাই দেশের উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার , তারুন্যই আমাদের শক্তি
জঙ্গীবাদ দমনের প্রধান হাতিয়ার হোক এদেশের তরুনরা ।
বিঃদ্রঃ জংগীদের আয়ের তথ্য সুত্র ফোবার্স ম্যাগাজিন

No comments:

Post a Comment